প্রকাশিত: Wed, Jan 4, 2023 2:19 PM
আপডেট: Sat, Dec 6, 2025 8:54 PM

কারা সত্যিকারের নায়ক?

রউফুল আলম

গ্রামের যে স্কুলে আমি পড়াশোনা করেছি, সে স্কুলে গেলাম। ছেলে-মেয়েদের প্রশ্ন করলাম তোমরা কী ফজলুর রহমান খানের নাম শুনেছো? ছেলে মেয়েরা শুনেনি। ফজলুর রহমানের নাম কেউই শুনেনি। বিষয়টা আমাকে বিস্মিত করেছে। কষ্ট পেয়েছি। আমি জানি না, আমাদের শিক্ষকরা ক্লাসে গিয়ে কী গল্প করেন। কিশোর-কিশোরীদের কাছে কাদের গল্প শোনান? জাতীয় পাঠ্য বইয়ে যে ফজলুর রহামানের নাম নেই, সেটাও বিস্ময়ের। অসম্ভব দুঃখজনক। কিশোর-যুবকরা যদি নায়ক চিনতে ভুল করে, তারা বহুদূর যেতে পারে না। স্বপ্নের নায়ক হতে হয় অনেক বড়ো। ফজলুর রহমান খান হলেন তেমন মানুষ। যিনি নায়ক। অনেক বড়ো নায়ক। এই খানের কাজ দেখার জন্য আমি শিকাগো শহরে গিয়েছিলাম। যে কয়দিন ছিলাম, শুধু খানের স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে বেরিয়েছি। সেসব নিয়ে ‘প্রথম আলোয়’ একটি লেখাও লিখেছি। দুনিয়ায় কিছু মানুষ থাকে যারা জন্ম, জাতীয়তা, ধর্ম সবকিছু ছাপিয়ে পৃথিবীর সন্তান হয়ে যান। ফজলুর রহমান খান ছিলেন তেমন একজন। 

বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে কুড়ি শতকে তাঁর মতো এতো বড়ো হতে পেরেছে, তেমন মানুষ খুব বেশি নেই আমাদের। ফজলুর রহমান ছিলেন আধুনিক শিকাগো শহরের রূপকার। স্কাইস্ক্রেপারের (গগণচুম্বী ভবনের) জনক। দুনিয়া কাঁপানো এক স্থপতি। তাঁর মতো মানুষের কথা পাঠ্য বইয়ে নেই। আফসোস। সারা দুনিয়ায় আমাদের অনেক মানুষ আছেন, যারা জ্ঞানÑগবেষণা ও বিজ্ঞানে অবদান রাখছেন। তবে কিছু কিছু মানুষের অবদান অনেক বড়ো। আমাদের সময়ের তেমন এক নায়কের নাম জাহিদ হাসান। জাহিদ হাসানের মতো বাংলাদেশি বংশদ্ভুত বড়ো বিজ্ঞানী খুব বেশি নেই। তিনি প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হওয়া কতো কঠিন, সেটা আমাদের তরুণদের তেমন একটা ধারণা নেই। তারচেয়েও অনেক কঠিন হলো, সেখানে প্রফেসরশিপ ধরে রাখা। এইসব ইউনিভার্সিটিতে সাফল্য ধরে না রাখতে পারলে, বিশ্ববিদ্যালয় কাউকে কিক-আউট করতে দ্বিধা বোধ করে না। আমাদের দেশের মতো লাইফ গ্যারান্টেড ইউনিভার্সিটির চাকরি খুব বেশি দেশে নেই। প্রয়াত আব্দুস সাত্তার খান ছিলেন আমাদের দেশের আরেক মেধাবী। ঢাকা ইউনিভার্সিটির কেমেস্ট্রির ছাত্র ও শিক্ষক ছিলেন। বাংলাদেশের অতিসামান্য কিছু বাঘা বিজ্ঞানীদের একজন ছিলেন এই আব্দুস সাত্তার। নাসায় কাজ করেছেন। 

তাঁর উদ্ভাবিত শঙ্কর ধাতু ব্যবহার করা হয়েছে নাসার স্পেইস শাটলে। তারাই হলো নায়ক। সত্যিকারের নায়ক। এইসব অন্তরালের নায়কদের চিনতে হবে। তাদের কর্ম সম্পর্কে জেনে তাদের ছাড়িয়ে যাওয়ার ইচ্ছে থাকতে হবে। আমাদের সময়ের এমন আরও কিছু নায়কদের একজন প্রফেসর সাইফ ইসলাম। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ডেভিসের প্রফেসর। আমেরিকার ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের ফেলো। বিজ্ঞানের জন্য আমেরিকার সবচেয়ে বড়ো সংগঠন এটি। এমন প্রতিষ্ঠান শুধু তাদেরই ফেলো নির্বাচিত করে, যারা বিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। আমাদের দেশের মতো মন্ত্রী আর সচিবদেরকের দিয়ে বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান চালায় না ওরা। সাইফ ইসলামকে নিয়েও আমি প্রথম আলোয় লিখেছিলাম। বড়ো হতে হলে বড়ো নায়ক চিনতে হয়। বড়ো মানুষদের জানতে হয়। তাদের কর্ম জানতে হয়। বড়ো হতে হলে বড়ো মানুষদের কথা অকৃপণভাবে তুলে ধরতে হয়। বড় হতে হলে, নায়ক চেনো। জাহিদ হাসান, সাইফ সালাউদ্দিন, সাইফ ইসলাম, ফজলুর রহমান খান এদের মতো নায়ক। যারা জন্মায় ছোট্ট এক ঘরে হয়ে যায় সারা দুনিয়ার। লেখক : গবেষক। ফেসবুক থেকে